ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিল শুনানি আজ

দৈনিক মার্তৃভূমির খবর
আপলোড সময় : ১০-১২-২০২৪ ১১:৩৪:৪৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-১২-২০২৪ ১১:৩৪:৪৯ পূর্বাহ্ন
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিল শুনানি আজ
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর করা আপিলের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে আজ।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানি শুরু হতে পারে।

এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর করা আপিলের শুনানি শুরু হয়। প্রথমদিনের শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দিন ঠিক করেন আদালত।

গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। আদালতে ওইদিন আপিল আবেদনের শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

প্রথমদিনের শুনানির বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, শুনানিতে যা বলা হয়েছে তা হলো, যারা রিট আবেদন দায়ের করেছিলেন তারা বলেছেন জনস্বার্থে আবেদন করেছেন। কিন্তু মূলত এটা জনস্বার্থের রিট আবেদন করা হয়নি। এটি করা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। তারা যে রিট আবেদন করেছেন তাদের সেই এখতিয়ার নেই। তারা জনস্বার্থে বলেছেন কিন্তু মূলত রিট করেছেন ব্যক্তি স্বার্থে এবং রাজনৈতিক স্বার্থে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন যেটি সামনে এসেছে, নির্বাচন কমিশনের সামনে ইলেকশন প্রসেস ও ইলেকশন রেজিস্ট্রেশন প্রসেস শেষ হওয়ার আগেই তারা রিট করেছে। বিষয়টি তখনো নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিচারাধীন ছিল। এ দুটি পয়েন্টে আজ (৩ ডিসেম্বর) যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) আবার শুনানির জন্য আসবে। এদিন নির্বাচন কমিশন ও অন্যপক্ষকেও শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়ে আসতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ২২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দেন।

আদেশের বিষয়ে ওইদিন আইনজীবী শিশির মনির বলেছিলেন, বিলম্ব মার্জনা করে আপিল পুনরুজ্জীবিত করার অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আমরা এ আপিল শুনানির জন্য নিয়ে আসবো। এ মামলার আপিলকারী মৃত্যুবরণ করায় নতুন আপিলকারী স্থলাভিষিক্ত হবেন, এরপর নতুন করে আপিল শুনানির জন্য আবেদন করা হবে।

তিনি বলেন, এটি একটি সার্টিফিকেট আপিল। হাইকোর্ট বিভাগই সার্টিফিকেট দিয়েছিল যে এখানে সাংবিধানিক ইস্যু জড়িত। লিভ টু আপিল না করে সরাসরি আপিল করা যাবে। হাইকোর্ট বিভাগ যেখানে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, এ ধরনের মামলা শুনানি ছাড়া খারিজ করা যায় না। এজন্য আমাদের বিলম্ব মার্জনা করেছেন ও আপিল পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

শিশির মনির বলেন, শুনানিতে অপরপক্ষ থেকেও আপত্তি নেই মর্মে জানানো হয়েছিল। আপিল শুনানির সময় প্রতীকের বিষয়টিও আসবে। আপিল মঞ্জুর হলে নিবন্ধনের সঙ্গে আশা করি প্রতীকও অ্যালাউ হবে।

হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে বলেছিলেন, হাইকোর্ট এই মামলায় বিভক্ত রায় দেন। দুই বিচারপতি নিবন্ধন বাতিল করে রায় দিয়েছেন। আরেকজন বিচারপতি নিবন্ধনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। নিবন্ধন বাতিলের পক্ষে যিনি আর্গুমেন্ট করেছেন তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নিবন্ধন মামলা এইভাবে বাতিল করার জন্য আবেদন করেছেন তিনি নিজেই পক্ষ দোষে দুষ্ট। কারণ কোনো রাজনৈতিক দলকে ধর্মের ভিত্তিতে কিংবা কোনো ধর্মীয় আচার আচরণের ভিত্তিতে পরিচালিত কোনো রাজনৈতিক দল পৃথিবীর কোথাও নিষিদ্ধ করা হয় না। জামায়াতে ইসলামী একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের সব পার্লামেন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এভাবে কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল করার কোনো কারণ থাকে পারে না। এটি গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২ এর পরিপন্থি এবং বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপন্থি।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় জামায়াতের আপিল খারিজ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) করে আদেশ দেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গত ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এরপর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে খারিজ হওয়া আপিলটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করা হয়।

এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরবর্তীতে হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় গত নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ বলে আপিল খারিজের আদেশ দেন। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল থাকে।

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিট করেন।

২০১৩ সালের ১২ জুন জামায়াতের নিবন্ধন প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি শেষে রায়ে জন্য রাখা হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।

সেসময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একই সঙ্গে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দেন। তবে ওই রায় স্থগিত চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ওই আপিল শুনানিতে উদ্যোগ নেন রিটকারী পক্ষ।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ